জানা গেছে, উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর বাজার সংলগ্ন চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত সাঁকোটিই দুই পারের বাসিন্দাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা। বিশালাকৃতির ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হওয়ার সময় ভয়ে থাকে সবাই। কখন যেন পা পিছলে পড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। সাঁতার না জানা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশংকায় থাকতে হয় অভিভাবক ও শিক্ষকদের।
একটি সেতুর অভাবে এমন দুর্দশা এখানকার বাসিন্দাদের। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার বলেও কোনো ফল পাননি । আশ্বাস মিললেও মেলেনি সেতু। তাই, প্রতিবছর দুই পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ, খুঁটি। এটি তত্ত্বাবধান করে খানপুর বাজার কমিটি।
বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস জানান, সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও সোমবার খানপুরে হাট বসে। পাশের শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ হাটে প্রায় অর্ধ শতাধিক কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন । তাদের পণ্য পারাপারে একমাত্র ভরসা বিশালাকৃতির এই সাঁকোটি। এছাড়া কয়েকশ' শিক্ষার্থী নিয়মিত পার হয় এ সাঁকো দিয়ে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাদের অভিভাবকরা। একটি বেইলি সেতুর দাবি অশোক বিশ্বাসের।
খানপুর চিত্রা নদী পার হলেই উত্তরে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সীমাখালি, কাতলী, ছয়ঘরিয়া হরিশপুর, খোলাবাড়িয়া, আড়ুয়াকান্দি ও পাঁচকাউনিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন পারাপার হয় এ সাঁকো দিয়ে।
এর মধ্যে বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পারাপার হয় ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে। এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেই একাধিকবার সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে । কাছাকাছি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় তারা শালিখা উপজেলা থেকে বাঘারপাড়া উপজেলায় পড়তে আসে ।
শালিখা উপজেলার বাসিন্দা ও বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন এ সাঁকো দিয়ে নিয়মিত পারাপার হন। কয়েকবার সাঁকো থেকে পড়ে আহত হওয়ার স্মৃতিও রয়েছে তার।
সুমাইয়ার সাথে সুর মিলিয়ে একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী দিশা পাল বলে, ‘আমাগের বাড়ির ধারে ভাল ইস্কুল নেই। তাই একেনে (এখানে) ভর্তি হয়েছি ক্লাস সিক্স (৬ষ্ঠ শ্রেণি) থেকে। বর্ষাকালে দুই বার সাঁকো থেকে পড়ে গিইলাম। বই-খাতা ভিজিল। ব্যথাও পাইলাম।’
শুধু সুমাইয়া খাতুন ও দিশা পাল নয় তাদের মত দশম শ্রেণির ছাত্র বিজয় পাল, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বিনয় বলেন, সাঁকো পার হয়ে স্কুলে আসতে তাদের ভয় লাগে। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সাঁকো পার হতে কষ্ট হয়। কাদা পানিতে একাকার হয় নদীর পাড়। তখন পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে বেশি।
খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিশাল এ সাঁকো পার হয়ে আসতে শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট হয়। সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেই আহত হয়েছে। ছেলে মেয়েদের কষ্ট লাঘবে আমরা অনেক দিন ধরে একটি বেইলি সেতুর দাবি করে আসছি। খানপুর চিত্রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ হলে সবারই সুবিধা হবে।’
নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের আবুল সরদার বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে মৌখিকভাবে দাবি জানিয়েছি। শিগগরই লিখিতভাবে উক্ত স্থানে সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি উপস্থাপন করবো।’